Header Ads

ad728
  • Breaking News

    খোলা কলাম, লেখক-হাফেজ মোঃ ওমর ফারুক


     বগুড়া জেলা শেরপুর থানার সুঘাট গ্রামে জন্ম আমার,

    আমি এই গ্রামের ছেলে যা গর্বের সহিত বলতেই ভালবাসি এটা আমার গ্রাম,💞 জন্মস্থানের হাল যত করুণই হোকনা কেন, আমিতো এখানেই বেড়ে উঠেছি বুঝতে শিখেছি এমাটির ঘ্রাণেই তৃপ্তি লুটেছি মায়ের মমতা।💞 আমার গ্রামটি ৮নং সুঘাট ইউনিয়ন ঘোষনা না হলে হয়ত অনেকের কাছে অধরায় রয়ে যেত সবার অগোচরে, অবস্য এর অনেক কারণও আছে বটে। বড় কারণ গ্রামটি শহুরে বাবুদের সাথে সংযোগ স্থাপনের মুল রাস্তায় বাঁধা হিসেবে কাজ করে গ্রামের পশ্চিম ধারঘেষে বয়ে চলা বাঙ্গালি নদী নামক এক অভিশপ্ত জলরাশি-😪 হয়ত সে কারণেই গ্রামটি বড় বাবুদের নজরে আসে না তেমন। তাই গ্রামের ভাগ্য খোলা দুরের কথা- গ্রামের লোকদের করুণ আহাজারি শব্দদূষণ ভেবে অনেকেই বিরক্তির ঢেঁকুর তোলে সম্ভবত।😪 হা এটা আমার গ্রামের পাশেদিয়ে বয়ে চলা বাঙ্গালি নদীর কথায় বলছি, এখানেই শৈশব কাল কাটিয়েছি আমি- এ নদীর পাড় ঘেষেই আমার ছোট্ট গ্রাম। সুঘাট,ফুলজোড়,মধ্যভাগ,গুয়াগাছি,আওলাকান্দি এসব গ্রামের লোকেরা জীবিকার তাগিদে ছুটেচলি প্রতিনিয়ত, এই নদীর বুকে কাঠের খেয়া বা নৌকাটিই আমাদের ওপারে যাবার একমাত্র দ্বারপথ।😪 খুব ছোট তখন- এ নদীর মাঝ বরাবর ছিল আমাদের সুঘাট গ্রামের বিশাল বাজার বা হাট, বড়বড় বটগাছ ছিল-ছিল কৃষ্ণচূড়ার ইয়া-বড় গাছগুলোও, যা সবি আজ স্মৃতিহয়ে আছে জীবন পাতায়। নিজ চোখে নদীর গর্ভে বিলীন হতে দেখেছি আমি নানাজীর সারে তিনহাত কবর টুকোও।😪 অনেক রাগ হতো- নদীর যৌবন কালে পানির ভয়াল ঘ্রাসে মূর্হতেই নদীর গর্ভে বিলীন হত তিলতিল করে গড়ে-তোলা বাড়ি ঘরসহ ভিটেমাটি সবি। প্রতিবৎসর চলতো এই ধংস যজ্ঞলীলা- ভিটেহারা লোকদের কষ্টদেখে খুব ক্রধিত হয়ে নিজে নিজেই বোবা-কান্না করতাম।😪 কিছুই করার ছিল না নির্বাক দৃশ্যে পাঁজর ভাঙা আকুতি নিয়ে সব দেখেই যেতাম, আমাদের বাঙ্গালি নদীর ওপারে ছিল এগ্রামের লোকদের জরুরত মেটাবার মুল কেন্দ্রস্থল। রুজি-রুটির ব্যাবস্থা করতে ওপাড়ে যাওয়া যেন গ্রামের লোকদের শেষ ভরসার মাত্র একটি কাঠের খেয়া, কারণ ওপারেই যত কলকারখানা- এবং বড়লোকদের হোটেল গুলোতে দিন মজুর হিসেবে ঘাঁম ঝড়িয়ে পরিবারের জন্য দুমুঠো রিজিকের জোগান পকেটে নিয়ে- রাতেই আবার বাড়ি ফেরা হত একমাত্র এই নদীর ঘাটে খেয়া পারের প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়ে। খেয়া পারাপারে দেরি হওয়াতে না খেয়েই খুদাপেটে কতরাত ঘুমিয়ে যেত গরীব বাবার অভাগা অনেক দুলালেরা। হা কারণ নদীই যাদের একমাত্র সোনার বাংলা দর্শনের একমাত্র পথ- তাদের দুলালরা না খেয়ে ঘুমিয়ে গেলে কারবা আসে যায়।😪 একটা কাঠের খেয়া বিনে পারাপারের জন্য অন্য কোন ব্যাবস্থা আশাকরা স্বপ্নের মত মনে হত আমাদের কাছে। স্বাস্থ্য সেবার জন্য জরুরি হাসপাতাল ক্লিনিকের সেবাপেতে কাঠের খেয়াতে পারাপারেই ছিল একমাত্র পথ- দুচোখে নদীর পাড়ে শত রুগীর মৃত্যু যন্ত্রণা দেখে বড় হওয়া এই আমি।😪 কোন ফেরীতে নয় ছোট কাঠের খেয়াতেই অনেক মায়ে নবজাতকের জন্ম দিয়েছে সাভাবিক ভাবেই, আবার পারিবারিক কলহের জেরে অনেকেই বিষপান করে খেয়াঘাটে জীবন দিয়েছে যা দুচোখে আজো ভাসে।😪 তখন মনে হত যদি খেয়াবিনে নদীতে বাঁশের তৈরি ঝুলন্ত কিছু থাকতো- তবে হয়তো অনেকের জীবন অকালে ঝরেযেত না।😪 খুব ভাবতাম একবুক স্বপ্নও দেখতাম ওহ্ বলতে ভুলেই গেছি এস্বপ্ন আমি নিজেথেকে দেখিনি, ভোটের সময় আমাদের বাজারে অনেক নেতার হঠাৎ আগমণ ঘটতো।😅 যাদের বক্তৃতার হেডলাইন ছিল এবার সংসদে গেলে সর্বপ্রথম এই নদীতে নাকি ব্রীজ হবে! এখনো মনে আছে দাদুদের উঠনে এসে কত চামচিকা বুড়ো দাদুর চুলছাড়া মাথায় তেল মলিয়ে ভোট ভিক্ষা চাইতো।🤔 দাদুরাও একবুক স্বপ্ন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মাঞ্জাতে গামছা বেঁধে সংসদের যাওয়া রাস্তা মেরামতে নিজেকে সর্বদা উৎসর্গ করতো।👍 এভাবে অনেক বক্তৃতার হেডলাইন নিজ কানে শুনে আমি বড় হয়েছি- অনেক নেতার আগমণ দেখেছি সংসদে তারা ঠিকি গিয়েছে তবে হেডলাইন টুকো মুখস্থ না থাকায় সংসদে উত্থাপিত হয়নি আমাদের কষ্ট গুলো।😪 শৈশব পেরিয়ে আজ বড় হয়েছি দেশ অনেক উন্নত হয়েছে🥰 শুনেছি দেশ নাকি আজ ডিজিটালও হয়েছে আর হবেই না বা কেন? যমুনা সেতু পদ্মা সেতু অমুক সেতু তমুক সেতু- দেশের মানুষ যখন সবাই সুখে, তখন কে মনে রাখে আমাদের এই ছোট্ট গ্রামের কথা? বাঙ্গালি নদীর ব্রিজ না হয় স্বপ্নই রয়েযাক চাষা অশিক্ষিত গেঁয়ো গরীব লোকদের মনে।😪 দেশ সিঙ্গাপুর হয়েছে সবার ভাগ্য খুলেছে শুধু ভাগ্য খোলেনি আমার গ্রাম এবং আশপাশ আরো দশটি গ্রামের, যাদের জীবন জীবিকা নির্ভর করে অভিশপ্ত এই বাঙ্গালি নদীর পারাপারকে কেন্দ্র করেই।😪 হা আজো সেই বাঙালি নদীর কাঠের খেয়াতে পার হয়ে আমিও খুব সকালে ছুটি রিজিকের তালাশে নদীর ঐপাড়ে, রাত গভীর হলে কন্ঠচিরে আগের মতুই শতডাকে ঘুম ভাঙে খেয়ামাঝি দয়াল চাঁনের।😪 সবাই ভাল থাকুক- আমরা না হয় বিষ খেয়ে মরি নদীর ঘাটে, মায়েরা আরো ডজন ডজন বাচ্চা প্রসব করুক কাঠের খেয়াকে ক্লিনিক বা হাসপাতাল ভেবে। সবাইতো সুখে- আমরা না হয় মরেমরে স্বপ্ন দেখি সামনের ভোটে নেতার কথা কাজে দেবে এমন ভেবে। 😅 গ্রামের নদীতে একদিন ব্রীজ হবে স্বপ্ন দেখে দাদু চাচ্চুরা ঠিক যেমন কবরে শুয়েগেছে- আমরা না হয় তাদের মতুই স্বপ্নবুনে সংগ্রহে রাখি, আর তোমরা নেতারা মিথ্যে আশার বুলি ছেড়ে আখির গুছে আগের মতুই চলুক ফাঁকি।

    কোন মন্তব্য নেই

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728